ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় জমি দখলের জন্য সংখ্যালঘু রবিদাস সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সারির পত্রিকা দৈনিক প্রথমঅালো। তারা বলছেন গত শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই পরিবারের অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
দুর্বৃত্তদের হামলার খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দখলদারদের হটিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সামনে উচাখিলা-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কের পাশে ১০ শতক জমিতে মৃত কৈলাস রবিদাসের পরবর্তী প্রজন্ম বংশানুক্রমিকভাবে বসবাস করছে। সম্প্রতি তাঁদের মূল্যবান জমি দখলের পাঁয়তারা করে একই এলাকার আবদুল আউয়াল ও তাঁর লোকজন। উচাখিলা বাজারের ভিটেমাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উচাখিলা ইউপির চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এ সমস্যাটি সমাধান করার জন্য তিনি গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে ইউপিতে উভয় পক্ষকে ডেকেছিলেন। রবিদাস পরিবারের লোকজন তাঁর কাছে গেলেও আউয়ালের পক্ষ থেকে কেউ যাননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঈদের পরে বসবেন বলেছিলেন। রাতে তিনি জানতে পারেন, সংখ্যালঘু পরিবারটির ওপর হামলা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আহমেদ কবীর আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতের হামলার ঘটনায় রবিদাস পরিবারের পক্ষে অর্জুন রবিদাস বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে।
অন্যদিকে অারো একটি পত্রিকা কালেরকন্ঠ জানাচ্ছে যে,
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উচাখিলা বাজারে রবিদাস পরিবারের বাড়ি দখলের চেষ্টা চালায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এতে বাধা দিতে গেলে বাড়ি ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করে তাণ্ডব চালানো হয়।
এ সময় নারীসহ আহত হয়েছে পাঁচজন। গুরুতর আহত চারজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার উচাখিলা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। রাতেই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সংখ্যালঘু লোকজন ও এলাকাবাসী।
আহতরা হলেন- শুভ রবিদাস (১২), মোহন রবিদাস (৪০), সূচি রানি রবিদাস (২৫) মিনতি রানি রবিদাসকে (২৫)। হামলার খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ কবীরের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটকের কথা ওসি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সামনে দিয়ে চলে গেছে উচাখিলা-ঈশ্বরগঞ্জ সড়ক। ওই সড়কের পাশে ১০ শতক জমিতে স্বর্গীয় কৈলাস রবিদাসের পরবর্তী প্রজন্ম বংশানুক্রমিকভাবে বসবাস করে আসছে।
সম্প্রতি রবিদাস সম্প্রদায়ের ওই মূল্যবান জমির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আবদুল আউয়াল গংদের। আউয়াল গংদের অনেকেই সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তাঁরা প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। ওই প্রভাব খাঁটিয়ে আজ শনিবার আউয়ালের ছেলে স্থানীয় যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আশ্রাফুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি দল রবিদাস সম্প্রদায়কে ভিটে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা জন্য বাড়িতে প্রবেশ করে সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলার শিকার নারী ও শিশুদের চিৎকার ও কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। এ সময় বাজারের লোকজন ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, তিনি সালিসের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করার জন্য আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আউয়ালের লোকজন সালিসে আসেনি। পরে তিনি খবর পান রাত সাড়ে ৮টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িঘরে হামলার তান্ডব প্রত্যক্ষ করেন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
স্থানীয় যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান অভিযুক্ত সোহেল তার সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক বলে স্বীকার করে বলেন, এটা দলের কোনো বিষয় না। সম্পূর্ণ সোহেলের একান্ত বিষয়। দল কখনো এসব অনিয়ম বরদাস্ত করে না।
অভিযুক্ত সোহেল বলেন, আমাদের জমিতে জোরপূর্বক মার্কেট করে দখলে নিয়েছে ওই পরিবার। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলে আমাদের দুটি মোটরসাইকেল রবিদাসের পরিবার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে প্রতিবাদ করলে তারা নিজেরাই বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে ভাঙচুর করে। আমার কোনো লোকজন এ ঘটনায় জড়িত নয়।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আহম্মেদ কবীর জানান, খবর পেয়ে তিনি বেশ কিছু পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।