বিয়ে অাগে জেনে নিন মাঙ্গলিক দোষ কি?

“কপালের লিখন কে করে খণ্ডন “..
এ তো প্রচলিত মতের লোককথা। কিন্তু এই ভোগ যখন বাস্তবিক তখন ভয় সকলের। সাধারণ ভাবে বলা হয়, যে, কর্মের ফল তাই প্রারব্ধ এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়। কিন্তু তবু আমরা ভবিষ্যত্‍ নিয়ে প্রত্যাশী, আর বার বার সেই প্রত্যাশায় ভর করে জ্যাতিষচর্চার দিকে আমাদের গতি। ওই যে বলে, বিপদ পূর্বপরিকল্পিত হলেও জানা থাকলে সচেতন থাকা যায়। আর সচেতনতা তো গুরুজপের মতো,মৃত্যু ঘটাবে না বরং অঙ্গচ্যুতি হোক প্রাণ বেঁচে যাবে।

এবার আলোচনায় আসা যাক।

মাঙ্গলিক কি, তথা প্রাথমিক জ্যোতিষ চর্চার বিচারে মাঙ্গলিক বলতে কি বোঝায়। সাধারণ ভাবে আভিধানিক অর্থ বলে, মাঙ্গলিক শব্দের অর্থ হলো মঙ্গল বা শুভকার্য বা মঙ্গলজনক উপাচার বুঝি। মঙ্গলের প্রভাব সকলেই ফল ভোগ করে। এই মঙ্গল ঐশী, ব্যক্তিত্ব, দৃঢ়তা , প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি দান করে। কারোর লগ্নে, কারোর ছকে কোন না কোন বিবিধ ঘরে অবিস্থান করে। কিন্তু তাতে সব ফলই দোষে দুষ্ট নয়। জ্যোতিষ গবেষণা বলে, জাতক বা জাতিকা প্রত্যেকের দশা অন্তদশা থাকে। আর জাতিক বা জাতিকার জন্মকালীন দশায় যদি মঙ্গল ১, ৪, ৭, ৮ বা ১২ নম্বর দশায় থাকে তবে তা দুষ্ট প্রভাব দান করবে। অর্থাত্‍ সে জাতক বা জাতিকা মাঙ্গলিক হবে। কিন্তু এখানে সে আংশিক মাঙ্গলিক ও হতে পারে। কিন্তু এর প্রভাব কি? এই উদ্দিষ্ট ঘরে মঙ্গলের যে বৈশিষ্ট্য রাগ, অভিমান শরীরের সাথে মানে লগ্ন থেকে ক্রিয়া করে। লগ্ন হলো মানবিক শরীর। এই শরীরে মঙ্গল তার বৈশিষ্ট্যগুলিতে প্রভাব বিস্তার করে। আর অবচেতন মনের মতই সেই প্রভাবিত অংশে মঙ্গল তার বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রভান দেয়।

এটা অনেকটাই রক্তের বিবিধ গ্রুপের প্রভাব বৈশিষ্ট্য মতো হয়ে থাকে। এটা মনে রাখতে হবে জাতক বা জাতিকার জন্য ছক, ছকের জন্য জাতক বা জাতিকা নন। দক্ষিণ ভারতীয় জ্যোতিষ মতে দ্বিতীয় ঘরকে বিবাহ জীবনের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে বাচনিক ও খাদ্যাভাস ভীষণভাবে প্রভাববিস্তার করে। কারণ বিবাহ ও সংসারের ক্ষেত্রে আত্মীয় স্বজন, বাচনিক ও খাদ্যাভাস কিন্তু বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। চতুর্থ ঘর হোল গৃহ, তার অবস্থান, চিন্তা, মা, এগুলো কিন্তু সংসারের বাইরে নয়, তাই বিবাহ জীবনে এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। এরপর হলো সপ্তম ঘর, যেখানে আসে জাতক বা জাতিকার জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনী, ব্যাবসা, কামনা, আকারগত অভ্যাস সবটুকুই। এখানে প্রভাব যদি দুষ্ট হয় তবে সমস্যা প্রবল। আর সেই প্রভাবেই বিবাহ জীবনের উপর প্রবল প্রভাব পড়ে। অষ্টম হলো আয়ু, পৈতৃকসম্পত্তি, আর কাম বাসনার স্থান, এককথায় সেক্সচুয়াল জীবন। এই সুখ তা রিপু যাইহোক না কেন, এগুলি কিন্তু মন ও দেহের সাথে সম্যক ভাবে যুক্ত।

আবার দ্বাদশ ঘরে যার অবস্থান তার চাহিদার সাথে আর একজন মাঙ্গলিক দোষ নেই তাঁর চাহিদা মিলবে না, তাই বিবাহ যোগে সে বিপদ আসবেই। কিন্তু এমন তো নয় যে, মঙ্গলের প্রভাব আছে মানেই সে খারাপ। কারণ বলা হয় মঙ্গল যখন রাহুর সাথে যোগ হয় তখন তার প্রভাব একজন মাঙ্গলিক নয় এমন ব্যক্তির পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। যেমন রাহুর কাজ হলো কোন কিছুকে বাড়িয়ে দেওয়া। যেমন আমারা ভিডিও শব্দ বাড়িয়ে দি, এখানে আর কিছুই নয় কোন কাজকে আরো একটু বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু কেতু সেখানে গোপনে কাজ করে। কারোর যদি অষ্টম ঘরে মঙ্গল থাকে তখন রাহু তীব্র ভাবে বিরূপ ফল দেয়। এখন প্রশ্ন হলো যে মাঙ্গলিক যোগ আমাদের সাংসারিক জীবনে অনেক ক্ষতি করে এটা ঠিক। কিন্তু মাঙ্গলিক হলে কি ডিভোর্স হবে, তা কিন্তু ঠিক না। আবার মাঙ্গলিক হলে কি চাকরীর যোগ আসবে না, নাকি চাকরী চলে যাবে? এমন কথা সর্বৈব ভাবে মিথ্যা। কারণ সেটা বিচার করতে হলে একাদশের ঘর দেখতে হয়, সেখানে কোন শক্তিশালী গ্রহ থাকলে তার প্রভাব কম হয়।
মাঙ্গলিক মানেই যে স্বামী বা স্ত্রী মারা যাবেন তা কিন্তু নয়। কারণ মৃত্যু ছক গণনা করে বলে দেওয়া সম্ভব। আবার মাঙ্গলিক হলে যে সন্তান সম্ভাবনায় সমস্যা হতে পারে, তাও না। কারণ অষ্টম ঘরে মঙ্গলে ” বেড প্লিজার” হয়ত সম্ভব নয়, কিন্তু তাই বলে সন্তান সমস্যা কখনই নয়। কিন্তু অনেক জ্যোতিষ তান্ত্রিক বলছেন হোম যোগ্য করে, এছাড়া গাছের সাথে বিবাহ দিলে এই যোগ কেটে যায়, কিন্তু তাই কি যায়? তো কার্য কারণ তত্ত্বের উপর চলি, জাতক বা জাতিকার ভবিতব্য নির্দিষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো, যে, কোন জাতক বা জাতিকার জন্ম যদি ১৯৮৩, ১৭ ই জুলাই হয়, তবে তাঁর ছক সেখানেই স্থির। আজ ২০১৭ তে এসে সেই মাঙ্গলিক বা আংশিক মাঙ্গলিক সে যোগ কাটানো সম্ভব নয়, তবে কেন বলা হয় যে, মাঙ্গলিকের সাথে মাঙ্গলিকের বিয়ে হতে হয়? কারণ এতে ব্যবহার, আচার আচরণ মিলে যায়।

এখন প্রশ্ন হলো মাঙ্গলিক যোগে কি জাতক বা জাতিকার স্বাস্থ্যহানি হয়? না, মাঙ্গলিক মানেই স্বাস্থ্যহানি নয়, তবে যদি মঙ্গল কেতু বা রাহুর সাথে যুক্ত হয়, তবে তা শারীরিক বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু কাটানোর উপায় অনেকেই বলেছেন উভয় যদি মাঙ্গলিক হয় তবে কেটে যায়, কারণ এখানে ব্যবহার মিলে যায়। তবে মাঙ্গলিকের ক্ষেত্রে হনুমান চালিসা পাঠ যথার্থ। অনেকক্ষেত্রে নানা উপাচার বললেও তা যে, যথার্থ সেই নিয়ে বিবিধ মত আছে , তা তর্ক হয়, হয়ত সুখ সমৃদ্ধি আমাদের চাহিদা। তাই সুখ থাক নিরন্তর, দোষ শেষ হোক, এটাই কামনা পরমেশ্বর।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *